৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ৫০টি আসনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর এক পরিবীক্ষণের ফলাফলে ৪৭টিতেই অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থার বাংলাদেশ শাখার নির্বাহী পরিচালক ড
ইফতেখারুজ্জামান বিবিসিকে বলেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণের এবং বিশ্লেষণের
পেছনে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।
“নির্বাচন আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘনে
নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং একধরনের অভূতপূর্ব নির্বাচন হয়েছে যার
ফলে এই নির্বাচন অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসাবে আলোচিত হচ্ছে।”
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ৫০টি আসনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর এক পরিবীক্ষণের ফলাফলে ৪৭টিতেই অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
বিচার-বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে টিআইবি।
তবে টিআইবির এই রিপোর্ট সম্পর্কে নির্বাচন
কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরি বিবিসিকে
বলেন, সুনির্দিষ্ট আইনের ভেতরেই নির্বাচন হয়েছে, এবং নির্বাচন নিয়ে যে
কোনো অভিযোগের প্রতিকারের আইনি কাঠামো রয়েছে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিবীক্ষনের জন্য
র্যানডম স্যাম্পলিং বা দৈব-চয়নের ভিত্তিতে এই ৫০টি আসন নির্ধারিত করে
টিআইবি। শিডিউল ঘোষণার পরপরই সংস্থার কর্মীরা তাদের কাজ শুরু করেছিলেন।
পরিবীক্ষণের প্রাথমিক রিপোর্ট আজ (মঙ্গলবার) প্রকাশ করা হয়েছে।
বড় কী কী অনিয়ম হয়েছে
বড় কী কী অনিয়ম তারা দেখেছেন? বিবিসির এই প্রশ্নে ড ইফতেখারুজ্জামান একটি তালিকা তুলে ধরেন –
- নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
- প্রতিপক্ষের এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
- অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি
- বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মারার দৃষ্টান্ত রয়েছে
- জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে
- ভোট শুরুর আগে ব্যালট ভর্তি বাক্স দেখা যায়
- ভোট শেষের আগে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়
- গণমাধ্যমের জন্য ‘অভূতপূর্ব’ কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল
- নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসন প্রতিপক্ষকে দমন করার ব্যাপারে সরকারের সাথে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে ড জামান
বলেন, “নির্বাচন কমিশন যে যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে তা নিয়ে কোনো
বিতর্ক নেই। পুলিশ ও প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে নির্বিকার ছিল, অনেক ক্ষেত্রে
তারা নিজেরাও এই লঙ্ঘনের অংশীদার ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।”
প্রমাণ কী রয়েছে তাদের কাছে,- এই প্রশ্নে
ড জামান বলেন, “অভিযোগগুলো ব্যাপক এবং এসব অভিযোগের যথার্থতা এবং
গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়েছে…আমাদের প্রতিটি পর্যবেক্ষণ এবং
বিশ্লেষণ সম্পর্কে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।”
ইফতেখার জামান বলেন, ৫০টি আসনের ওপর পরিবীক্ষণের ফলাফল দিয়ে সারা দেশের নির্বাচনের পরিবেশ বিবেচনা করা যাবেনা।
“তবে এটি (নির্বাচনের) সার্বিক চিত্রের বহি:প্রকাশ বলে মনে করি।”
কী বলছে নির্বাচন কমিশন
টিআইবির এই রিপোর্ট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাৎ
হোসেন চৌধুরি বিবিসিকে বলেন, সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর ভেতরেই নির্বাচন
হয়েছে, এবং নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো অভিযোগের প্রতিকারের আইনি
ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছিল, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে এবং ইলেকটোরাল তদন্ত কমিটিও রয়েছে।
“নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং
নির্বাচনের পর এমনকি ভোটাররাও এই তিনটি হাতিয়ারের যে কোনোটির শরণাপন্ন হতে
পারেন। তাতে না হলে, সুপ্রিম কোর্টের ট্রাইব্যুনালও রয়েছে।”
No comments:
Post a Comment